নব দিগন্ত

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

বশির আহমেদ
  • ৬০
  • 0
হুরুন আলী গ্রামের আর দশ জন থেকে একটু আলাদা। দশ জনের মত সে কোন আড্ডায় নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ক্ষেতখুলার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। পৈত্রিক সূত্রে হুরুন আলী সাত কানি জমি পেয়েছে। জমিতে চাষাবাদ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালায়। হুরুন আলীর সংসার বলতে ঘরে দুই দুইটা বউ। এক জোড়া হালের বলদ, লাঙ্গল, জোয়াল, দুই খানা টিনের ঘর। ঘর গুলো পাট শলা দিয়ে বেড়া দেওয়া। বাড়ীর চার পাশ সুপারি গাছের পাতা দিয়ে ঘেরা। দূর থেকে বাড়ীটা কে সুপারি বাগান বলে মনে হয়। দু,টি ঘরের একটিতে নিজে বাস করে। অপর ঘরে ধান পাটের গোলা। সংসার ভরন পোষণের পর উদ্বৃত্ত অংশ বিক্রয় করে। বাড়ী থেকে অল্প দুরেই আড়ং (বাজার)। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত দৈনিক আড়ং বসে। সেখানেই হুরুন আলী তার ফসলাদি বিক্রি করে।

হুরুন আলীর সংসারে অভাব না থাকলেও সে খুব কৃপণ। আড়ং থেকে তেল নুন ছাড়া কখনো সওদাপাতি করে না। জমির উৎপাদিত ফসল দিয়ে সংসার চালিয়ে নেয়। এলাকায় সে কিপটা হুরুন নামে পরিচিত। প্রতি বছর উদ্বৃত্ত ফসল বিক্রয়ের টাকা দিয়ে জমি কেনে। বর্তমানে সে দশ কানি জমির মালিক। বার বছর আগে হুরুন আলী গ্রামেরই পিতৃ মাতৃহীন শহর বানুকে বউ হিসাবে ঘরে আনে। হুরুন আলী তখন বিশ বছরের যুবক। শহর বানুর গায়ের রং কালো হলেও দেখতে শুনতে নাক নকশায় যে কারো নজর কাড়ে। শহর বানু বেশ চটপটে। অল্প ক দিনের মাঝেই সংসারে নিজকে মানিয়ে নেয়। সংসারের যাবতীয় কাজ কর্ম সে একা হাতে সামলায়। রান্নাবান্না, ধানভানা, ধান সেদ্ধ করা, গরু-ছাগলের দেখাশোনা, ,ঘরদোর ছাপসুতরো করা। প্রয়োজনে হুরুন আলীর সাথে জমির কাজেও হাত লাগায়। হুরুন আলীর মা বেঁচে আছে। দেখতে দেখতে দুই বছর চলে গেল। শহর বানুর পেটে কোন সন্তান এল না। হুরুন এর মা অভিযোগ করতে লাগল। বেঁচে থাকতে বুঝি আর নাতি-নাতনির মুখ দেখে যেতে পারব না। হুরুন মার কথা কানে তুলে না। মা বিভিন্ন ছলছুতায় শহরবানুকে খোটা দিতে শুরু করে। বাঞ্জা বলে গালমন্দ করে। শহর বানু নীরবে সহ্য করে। দিন দিন মায়ের বকাঝকার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রতিবেশীরাও বাঁজা মেয়ে মানুষ বলে তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। প্রতি নিয়ত খোটা ঝামটা সইতে হয়। কথায় বলে জিংলা (বাঁশের কঞ্চি) ভাঙ্গে চুলার মুখ, শাশুড়ি আনে বউয়ের মুখ। না পেরে শহর বানু এক দিন মুখ খোলে। মায়ের প্রতিটি কথার জবাব দেয়া শুরু করে।

মা হুরুন কে আবার বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। বংশের চেরাগ রক্ষায় হুরুন কে আবার বিয়ের তাগাদা দিতে থাকে। হুরুন মায়ের কথা এড়িয়ে চলে। পাঁচ বছরের মাথায় নাতি- নাতনির মুখ দেখার অতৃপ্তি নিয়েই মা মারা গেল। মা মারা যাবার পর হুরুন আলী একা হয়ে পড়ে। সারাদিন পরিশ্রমের পর ঘরে এসে নিজকে একা একা লাগে। বুকটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হয়। চৈত্রের খড়ার মত হুহুকরে উঠে ।বাবা মারা গেছে সেই কোন কালে। মা ই তাকে বুকে পিঠে আগলে বড় করেছে। দিন দিন মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠে। শহরবানুর কোন কথাই তার ভাল লাগেনা। শহরবানুর প্রতি মনটা বিষিয়ে উঠতে থাকে। স্বামীর আচরণে শহরবানু কষ্ট পায়। সন্তান না হবার দোষ কি তার একার। সে ভেবে পায় না। স্বামীর কথার প্রতিবাদ করা শুরু করে। এক দিন গরু দুটোকে সময় মত খাবার দেওয়া হয়নি বলে হুরুন শহরবানুকে বকাঝকা শুরু করে।

মাগি তুই সারাদিন কি করিস? কোন লাঙয়ের বাড়ী লাঙ পাতাতে যাস?
বাঞ্জা (বাজা) মাগি কোনখান কার।


হুরুনের মুখ থেকে বাঁজা গালি শুনে শহরবানুর মাথায় রক্ত চড়ে উঠে।
খবরদার : বাজা-ইন্নার ঘ-রে-র বাজা-ইন্না। আমারে বাঞ্চা কইবিনা। নিজের মুরোদ নাই। তুই আমারে বাঞ্চা কছ। ছাল নাই কুত্তার মীর বাঘা ডাক।
-কি কইলি ছিনাল মাগি। আজ তোর ই একদিন কি আমার ই একদিন। বলেই হাতের কাছে থাকা লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে। লাঠি দিয়ে বাড়ি দিতে যাবে এমন সময় পাশের বাড়ী থেকে চাচী এসে হুরুনের হাত ধরে ফেলে। হুরুন গজরাতে গজরাতে বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়।

হুরুন আলীর পূর্ব পুরুষ বাজা-ইন্না ছিল (ডুলি)। তার বাবা পারিবারিক পেশা ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজে নিয়োজিত হয়। বংশ তুলে গালি শুনে হুরুনের মাথা গরম হয়ে যায়। গ্রামের অনেক মানুষই তাকে বাজা-ইন্নার পুত বলে গালি দেয়। হুরুন আলীদের পাড়াটি হাজাম পাড়া। এ পাড়ার বেশীর ভাগের আদি পেশা হাজাম। তারা গ্রামে গ্রামে খতনা করে বেড়ায়। দুর দূরান্তের গ্রাম থেকে অনেকে এসে হুরুনদের বিরক্ত করে। লোকদের হাজাম বাড়ী দেখিয়ে দিতে হয়।

হুরুনকে তার পুরুষত্ব নিয়ে খোটা দেওয়ায় তার আঁতে ঘা লাগে। জমিতে কাজ করতে করতে শরীরটা বার বার কেঁপে কেঁপে উঠে। দূরে শিমুল গাছে একটা চিল চিহি চিহি সরে একটানা ডেকে যাচ্ছে।চিলের ডাকে মেজাজটা আরোও তিরিক্ষি হয়ে উঠছে । পাশের জমিতে রমিজ কাজ করছিল। হুরুনের একা একা গজ- গজানির কারণ জানতে চায়।- কি হইছে হুরুন ? এমন রাইগা আছ কার উপর।
আর কইও না। -চ্যুত-মারানী মাগি আমারে কয় আমার নাকি সন্তান পয়দা করার খেমতা নাই। মাগির লগে দশ দশটা বছর ঘর করলাম এখন আমারে কয় আমি নাকি অক্ষম।
রমিজ হুঁকাটা টানতে টানতে কাছে এসে বসে।- শোন তুমি আর একটা বিয়া কর। দেখবা তোমার সন্তান হই বো।
কি কও ; এ বয়সে আমারে মেয়ে দিব কেডা ?
-তুমি কোরবানি কও। মেয়ের ব্যবস্থা আমি কর বো। তোমার মিয়া খাওন-পড়নের অভাব আছে নি। কত মাইয়ার বাপ তোমার কাছে মাইয়া দিতে দৌড়া দৌড়ি কর বো।
হুরুন তাৎক্ষনিক জবাব দিতে পারেনি। আইচ্ছা ভাই ব্বা দেখি। বলে ক্ষেতের কাজে মন দিল।
রমিজ বলল -ভাব ভাইব্বা চিন্তা আমারে কই ও। দেহি তোমার লাইগগা কিছু করতাম পারি কি না।


দুই দিন বাদে রমিজ হুরুন কে জিজ্ঞেস করল। কি মিয়া কি মনস্থির করলা?
দে-খ, যদি কোন সংসারী মাইয়া পাওন যায় তাইলে করু ন যায়। বংশ রক্ষা করতে না পারলে এ জমি জিরাতের কি হইবো ? কুত্তা বিলাইয়ে সব কামরাইয়া খাইবো। কাছা কাছি কোন এক গাছ থেকে কোকিল কুহু কুহু স্বরে ডেকে উঠলো ।

চার দিন বাদে রমিজ মেরাতুলির শুকুর আলীর মেয়ের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এল। শুকুর আলীর চার মেয়ে। কোন ছেলে নাই। অভাবের সংসার। মেয়েদের ভাল খাওন-পড়ন দিতে পারে না। দিন মজুরী করে যা আয় হয় তাতে ছয় জনের দুই বেলা পেট পুঁড়ে ভাত জোটে না। বড় মেয়েটা ডাঙর হয়ে উঠছে। বিয়ে দেবার সামর্থ্য নাই।। শুকুর আলীর চোখের ঘুম নাকের ঘুম হারাম হবার জোগাড়। এমন সময় রমিজ মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ আনল। শুকুর আলী যেন হাতে চাঁদ পেল। ছেলে কে, কি করে, কিছুই জানতে চাইল না। যখন জানল ছেলে পাশের গ্রামের হুরুন আলী সে খুশিই হলো। হুরুন আলী আর শুকুর আলীর বয়সের পার্থক্য খুব বেশী হবে না। বিয়ের খরচ কোথায় পাবে এ ভেবে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল শুকুর। রমিজ বলল বিয়ের খরচা পাতি নিয়ে তোমারে ভাবতে হইবো না। আমি হুরুনের কাছ থেকেই এর ব্যবস্থা করবো। শুকুর আলীর স্ত্রী প্রথম প্রথম অমত করলেও সংসারের আর সবার কথা ভেবে রাজি হয়ে গেল।

ফাগুন মাস দখিনা মৃদুমন্দ বাতাস শুরু হয়েছে ।গাছে গাছে নতুন পাতা আর ফুলে ফলে ভরে উঠছে চার দিক ।পাশের বাড়ী থেকে কামিনী ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে । নতুন বউয়ের কথা ভেবে হুরুনের মনে আনন্দ ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছে ।পাশে শহরবানূ বেহুশের মত ঘুমিয়ে আছে ।হুরুন আলী বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে আর ভাবছে । তার সন্তান হয়েছে । সারা বাড়ী ছেলেটি খেলছে । হুরুন আলীর জন্য জমিতে নাস্তা নিয়ে এসেছে । বলছে বাবা তুমি খেয়ে নাও ততক্ষণ আমি হাল দিচ্ছি ।


এক সপ্তাহ বাদে শুক্কুর বার বিয়ের দিন ঠিক হলো। চাচাত ভাই রহিম, দোস্ত সায়েদ আর রমিজকে বর যাত্রী নিয়ে হুরুন আলী আলতাবানু কে বউ করে ঘরে তুলল। আলতাবানু আলতার মতই সুন্দরী। গায়ের রং যেন দুধে আলতা মাখা। আলতাকে ঘরে তুলতেই শহরবানু গজ গজ করতে লাগল। আপন মনে বিড় বিড় করে বলতে লাগল -কেমন বাপমায়ের মাইয়া। বুড়া বেডার লগে বিয়া দিছে। ফকিরনির মাইয়া হবে নিশ্চয়।
কথাগুলি আলতাবানুর কানে খুব বাজছে। নতুন বউ কাউকে কিছু বলল না। কথাগুলো হুরুনের কানেও এসেছে।
রাতে হুরুন আলতাকে বুঝাল- পাগলীর কথায় তুমি কিছু মনে কইরো না। দশ বছর যাবত কোন বাচ্চাকাচ্চা না হওয়ায় মাথাটা বিগড়ায়ে গেছে। তুমি তার সাথে মিল মিস; করে চলো। কোন কিছু দরকার হইলে আমারে কই-ও আমি আইন্না দিমু।চ্

পর দিন ভোর রাত থেকে শহরবানুর বিলাপের চোটে পাড়ায় টেকা মুশকিল হয়ে গেল। ঘুম অনেক আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল আলতার। হুরুন তাকে জড়িয়ে ধরে থাকায় বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিল না। শহরবানুর বিলাপে হুরুনের ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাইরে বেরিয়ে এসে শহরবানুকে ধমক দিল। শহরবানু চুপ মেরে গেল। হুরুন গোয়াল ঘর থেকে গরু গুলো বেড় করে লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে নিয়ে মাঠের দিকে পা বাড়াল।
হুরুন প্রায়ই মাঠে নাস্তা করে। কাজ ফেলে বাড়ী যেতে আসতে সময় নষ্ট করতে চায় না। শহরবানু প্রতি দিন নাস্তা মাঠে দিয়ে যায়। আজ কেন জানি বার বার আলতার মুখ টা মনে পড়ছে। কিছু কাজ ফেলে রেখেই বাড়ীর দিকে হাটা দিল। বাড়ীর কাছাকাছি আসতেই শহরবানুর খিস্তিখেউড় কানে এল। হুরুন কোন কিছু না বলে লাঙ্গল জোয়াল তুলে রেখে ঘরে এসে ঢুকল। আলতা রান্না ঘরে জাও রান্নায় ব্যস্ত। হুরুন আলী কে বাড়ীতে দেখেই শহরবানু চুপ হয়ে গেল। হুরুন শহরবানুকে ডাকল। শহরবানু এগিয়ে এল।
-শোন আলতার লগে ঝগড়াঝাঁটি করিস না। বাচ্চা মানুষ ওরে তুই কাজকাম শিখায়ে দিস। দুই জন মিলে মিশে থাকবি। তুই এরে ছোট বোনের মত আদর করিস।চ্
-যা নাস্তা হইলে নাস্তা নিয়া আয়। খাইয়া আবার আড়ং এ যাইতে হইবো। আলতার বাপেরে আইতে কই ছি।চ্
আলতা জাওয়ের পাতিল রান্না ঘর থেকে মাচানের উপর এনে রাখে।
শহরবানু পাতিল থেকে বাসনে করে হুরুন কে খেতে দেয়। হুরুন নাস্তা খেয়ে ডোলা হাতে আড়ং এর দিকে পা বাড়ায়।

হুরুনআলী কাক ডাকা ভোরে লাঙ্গল জোয়াল ও গরু নিয়ে মাঠে চলে এসেছে। ভাদর মাসের প্রায় শেষ। বন্যার পানি টান দিয়েছে। এখন জমিতে হাল না দিলে বীজ লাগানো যাবে না। জমি গুলো তারা তারি চাষ শেষ করতে হবে। বাড়ী থেকে শহরবানুর নাস্তা নিয়ে আসার কথা। সকাল থেকে লাঙ্গলের পিছে পিছে হাটতে হাটতে শরীরটা আর চলতে চায় না। খিধায় মাঝে মাঝে পেটের ভেতর মোচর দিয়ে উঠছে। বারবার হুরুন বাড়ীর পথের দিকে তাকাচ্ছে। বাড়ীতে আলতা আবার ছয় মাসের পোয়াতি। হুরুন সন্তানের বাবা হবে মনে হলেই মুখ টা খুশিতে ভরে উঠে। এত দিনে খোদা মুখ তুলে চেয়েছে। মাগি আমারে ব্যর্থ পুরুষ বলে গালি দিয়ে ছিল। খিধায় তো আর পারা যায় না। ছিনাল মাগি বাড়ীতে কি করছে ? নিশ্চয় আলতার সঙ্গে ঝগড়া করছে। আলতার পেটে সন্তান আসার খবর পাওয়ার সাথে সাথে মাগি কথায় কথায় ঝগড়া বাধায়। প্রথম প্রথম আলতা সহ্য করলেও এখন সেও
মুখ চালায়। দুই সতিনের ঝগড়ার চোটে ঘরে টেকা দায়। তাই হুরুন কাজ শেষ করে সন্ধ্যা বাড়ী ফেরে। খিধায় রাগে, দুঃখে, মনটা বিষিয়ে উঠছে।

শহরবানু খাবারের পোটলাটা আইলের উপর নামিয়ে রাখল। হুরুন আলী লাঙ্গলের পেছন পেছন ঘুরছে। সূর্য়ের তেজ বাড়ছে। বেলা প্রায় এগারটা হবে। আড়ং জমে উঠেছে। হুরুন খাবার নিয়ে কাছে যেতে ডাকল। বসে খাওনের সময় নাই। পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। সূর্যের তাপে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের ছিটাফোটও নেই । আকাশ যেন চৈত্রের খড়ার আকাশ । শহরবানুকে বোল থেকে জাও বদনায় ঢেলে তার হাতে দিতে বলল। শহরবানু জাও বদনায় ঢেলে হুরুনকে দিল।
হুরুন বদনার নল দিয়ে জাও গলায় ঢেলে দিতে লাগল। দু এক ঢোঁক গেলার পরই জাও আর নল দিয়ে বেড় হচ্ছে না। হুরুন হাত থেকে বদনাটা পানিতে ছুড়ে ফেলে দিল।
- ঐ চ্যুত-মারানি মাগি জাও বসাইয়া কোন লাঙ এর বাড়ী মারাইতে গেছিলি ?চ্ বলেই গরু তাড়নো পাচুনি দিয়ে শহরবানুকে পেটাতে শুরু করলো। পেটাতে পেটাতে শহরবানুকে জমির কাদা পানির ভেতর ঠেসে ধরল। দুর হতে জালাল দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে হুরুন আলী কে নিবৃত করল। শহরবানু বেহুশ হয়ে গেল। দেখতে দেখতে আশে পাশে লোক জন জড়ো হয়ে গেল।্ সবাই মিলে ধরাধরি করে শহরবানুকে বাড়ীতে নিয়ে গেল। আলতা বুবুর এ অবস্থা দেখে বালতি দিয়ে পানি এনে গা ধুয়ে ঘরে তুলে নিল। ভেজা কাপড় পাল্টিয়ে গরম পানির ছেঁকা দিতে শুরু করল। কিছুক্ষণ ছেঁকা দেবার পর শহরবানুর হুঁশ ফিরে এল। শহরবানূ হুঁশ ফিরে পেয়ে ঢুকরে কেঁদে উঠলো।। শহরবানু আর বিছানা থেকে উঠতে পারল না। সাত দিন বিনা চিকিৎসায় বিছানায় কাৎরাতে কাৎরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। তার জন্য আলতাবানু ছাড়া আর কেউ দুফোঁটা চোখের জল ফেলল না।

শহরবানু মারা যাবার তিন মাস পর এক ভোর রাতে আলতাবানুর প্রসব বেদনা শুরু হলো। হুরুন আলী কি করবে কোথা যাবে। কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। বাইরে আকাশ ফর্সা হয়ে এল। আলতাবানু ঘরে একা । তাকে রেখে যেতেও পারছে না। দৌড়ে গিয়ে পাশের বাড়ী থেকে চাচীকে ডেকে আনল। চাচী ঘরে ঢুকেই হুরুনকে তার শাশুড়িকে খবর দিতে বলল। কাকে দিয়ে খবর পাঠাবে ভেবে পায় না। বাধ্য হয়ে নিজেই এক দৌড়ে মেরাতুলী চলে গেল। পথে যেতে যেতে হাজারো পাখীর শীষ আর কলতান শোনা গেলেও হুরুন আলীর মন পড়ে আছে ঘরে আলতার কাছে ।
শশুর বাড়ীর দরজায় গিয়ে।- আম্মা আম্মা বলে ডাকতে লাগল। শুকুর আলী বাড়ী ছিল না। ডাক শোনে আলতাবানুর মা ঘর থেকে বেড়িয়ে এল।- কি হইছে বাবা ? বলে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো।
হুরুন জানাল -মা আলতা জানি কেমন করতাছে। আপনি তারা তারি চলেন। বলেই হুরুন আবার দৌড় দিল বাড়ীর দিকে। বাড়ীতে ঢুকতেই বাচ্চার কান্না কানে এল। আলতার মাও এসে গেছে। ঘরে ঢুকার সাথে সাথে হুরুনের চাচী জানাল -বেয়াইন নাতি হয়েছে। মিষ্টি খাওয়ান। বাইরে বেরিয়ে এল চাচী। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল- হুরুন তোর ছেলে হয়েছে ছেলে হয়েছে। আজান দে। আজান দে।চ্
হুরুন আজান দিতে জানেনা। এক দৌড়ে গিয়ে পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেব কে নিয়ে এল। আজান হলো।

আলতার কোল জুড়ে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। হুরুন আলীর আনন্দ আর ধরে না। হুরুনের বংশ রক্ষা হবে। সন্তানের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আনন্দে গর্বে বুকটা ভরে যায়। তিন দিন পর মসজিদে মিলাদ দিয়ে হুজুরকে দিয়ে সন্তানের নাম রাখা হলো। আলতার নামের সাথে মিলিয়ে নাম দেয়া হলো আতর আলী।
সাড়া পাড়ায় আড়ং থেকে জিলাপি এনে বিতরণ করলো।


আজ আতর আলীর ৬ষ্ঠ জন্ম বার্ষিকী। আলতা বানু ছেলেকে সুন্দর পোশাক পড়িয়ে বই খাতা হাতে তুলে দিয়ে স্কুলে পাঠাচ্ছে । হুরুন আলী নিজে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাবে। হুরুন আলী উঠানে দাড়িয়ে ভাবতে থাকে---------


হুরুন আলী লুঙ্গি গামছা ছেড়ে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পড়েছে। হাতে তার ছাতা। গর্বে তার বুকের ছাতিটা অনেক খানি বেড়ে গেছে। আতর আলী আজ জজ ব্যারিস্টার। হাজার হাজার বিচার প্রার্থী তার দরবারে। আতর আলী বিচারে রায় দিচ্ছে। ন্যায় বিচার পেয়ে সবাই খুশি। এখন হুরুন আলী কে আর কেউ বাজা-ইন্নার পুত বলে গালি দেয় না। ব্যারিস্টার সাবের বাবা বলে সমীহ করে------------------।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম মন ছোয়ানো গল্প । তবে বিনীতভাবে লেখককে সম্মান করেই বলছি, এসব গল্প কিশোর যুবাদের পড়তে উতসাহিত করার স্বার্থে একটা অনুরোধ- " ঐ চ্যুত-মারানি মাগি জাও বসাইয়া কোন লাঙ এর বাড়ী মারাইতে গেছিলি ?" - এই বাস্তব শব্দগুলো অন্য কোন প্রতীকি ভাষায় বা উহ্য রেখে প্রকাশ করা যায় কি না। আমার মত নগন্য মানুষ , আপনাকে উপদেশ দেবার ধৃষ্টতায় নয়, বিনীত অনুরোধ, বর্তমান প্রজন্ম এসব শব্দাবলীর সাথে ঠিক পরিচিত নয় , তাই লেখাকে তাদের দোর গোড়ায় নিয়ে যাবার স্বার্থেই অনুরোধ ।
বশির আহমেদ ভাই খন্দকার নাহিদ গল্পটি পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হলাম । ভাল থাকবেন এই কামনা ।
খন্দকার নাহিদ হোসেন বশির ভাই, নির্মোহ ভাবে কতো সুন্দর করেই না গল্পটা বললেন। ভালো লাগলো। খুব ভালো।
বশির আহমেদ ভাই পন্ডিত মাহি মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । গল্পের প্রয়োজনেই গালা গাল গুলো আনা হয়েছে । আমি বাস্তবতাকে আনকাট ভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি ।
পন্ডিত মাহী চমৎকার গল্প, তেমনি উপস্থাপনা... শুধু গল্পের মাঝে যে গালি গুলো এসেছে সে গুলো পড়তে ভালো লাগেনি...
বশির আহমেদ সুপ্রিয় আশা আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ । সত্যি বলেছেন গল্পের কাহিনীটি সমসাময়িক কালের নয় । আজ থেকে বিশ বছর আগের ধরে নিতে পারেন । তবে এখনো গ্রামে গঞ্জে এমন ঘটনা কিন্তু মাঝে মধ্যে ঘটে । আপনার জন্য শুভ কামনা ।
বশির আহমেদ ভাই সূর্য শেষ মহূর্তে হলেও আপনি গল্পটি পড়েছেন দেখে ভাল লাগছে । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
আশা সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় গ্রামীন জীবনের বাস্তব চিত্র আপনার কুশলী কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্রাম্য জীবনে শহরবানুর মতো অনেক অসহায় নারী অকালে প্রাণ হারায়। যা হত্যাকান্ড হওয়া স্বত্ত্বেও কেউ প্রতিবাদ করেনা। তবে বর্তমান যুগে এটা অত সহজ নয়। তাই আপনার গল্পটিকে বাংলার অতীত সমাজচিত্র বলে ধরে নেয়া যায়। আর চাষার ছেলে জজ হওয়ার যে গর্বটুকু গল্পে ফুটে উঠেছে- তা অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে। তাই লেখককে অসাধারণ দেয়া যায়।
সূর্য সাবলীল, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা অংশের উপাখ্যান। ভাল লেগেছে।
বশির আহমেদ ভাই রিফাত গল্পের শেষ প্যারাটি হুরুন আলীর মনের কল্পনা । গ্রামীন জীবনে অহরহ স্বামীর অন্যায় অত্যাচার আর নির্যাতনে বিনা চিকিৎসায় হাজারো নারী মৃত্যু বরন করে শহর বানু এদেরই একজন । শহর বানু পিতৃমাতৃহীন এক অসহায় নারীর প্রতিক ।

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪